মাধবপুর লেক
সুনীল আকাশ, ঘাঢ় সবুজ পাহাড়, শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মত মনোরম চা বাগানের দৃশ্যে হারিয়ে যান আপন মনে। চারিদিকে সুউচ্চ পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত লেকটি সত্যি অপূর্ব। লেকের ঝলমল পানি, ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ, শাপলা শালুকের উপস্থিতি আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলে। আস্তে আস্তে যতই সামনের দিকে এগুতে থাকবেন ততই ভাল লাগবে। মাঝে মাঝে বানর ও হনুমানের লাফালাফির দৃশ্যও চোখে পড়ে। মাধবপুর লেকে গিয়ে পৌঁছতেই সবুজ পাতার গন্ধ যে কারো মনকে চাঙ্গা করে তুলবে। চারদিকে সবুজ পাহাড়। পাশাপাশি উঁচু উঁচু টিলা। সমতল চা বাগানে গাছের সারি। হয়তো এরই মাঝে একঝাঁক পাখি অতিথিদের আমন্ত্রণ জানাবে তাদের সুরের মুর্চ্ছনা দিয়ে। পাহাড়ী পাখির গান আর নৃত্য ছাড়াও দেখা যায় নানান প্রজাতির বন্যপ্রাণী। মাধবপুর লেক যেন প্রকৃতির নিজ হাতে অঙ্কিত মায়াবী নৈসর্গিক দৃশ্য। সুনীল আকাশ আর গাঢ় সবুজ পাহাড়, শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মত চা বাগানের এই মনোরম দৃশ্য আকর্ষন করে নিয়ে যাবে ভিন্ন জগতে। চারদিকে সুউচ্চ পাহাড়ের মাঝখানে অবসি’ত লেকটি খুবই চমৎকার।
কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নে পাত্রখলা চা বাগানে লেকটির অবস্থান। এটি মৌলভীবাজার শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে ও শ্রীমঙ্গল থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্বে অবসি'ত। খানাখন্দে ভরা চা বাগানের রাস্তা দিয়ে এ লেকে যেতে হয়। মাধবপুর লেকের ঝলমল পানি, ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ, শাপলা শালুকের উপসি'তি মনোমগ্ধকর অনুভূতি জন্মায়। লেকের ভেতর ঝলমলে পানি, পানির ওপর নীলপদ্ম। ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ। শাপলা-শালুকের ভেতর হাঁসের খেলা। দশটি বাঁক নিয়ে এঁকেবেঁকে পাহাড়ের ভেতর তার চলা। চারদিকে সবুজ পাহাড়। উঁচু-নিচু টিলার সমাহার। জায়গায় জায়গায় ঢেউখেলা চা বাগানে সারি সারি বিভিন্ন গাছ। পাহাড়ি গাছের ফাঁক দিয়ে চুঁইয়ে আসা সূর্যকিরণ। হাঁটতে হাঁটতে এসব দৃশ্যেরই দেখা পাবেন আপনি।
বাইরে থেকে কিছু বোঝার উপায় নেই। টিলার পাঁজর ঘেঁষে এমন টলটলে জলের ভাসান। সেই জলের বুকে ১২ মাসই কমবেশি ভেসে বেড়ায় নানা জাতের হাঁস, সরালি, পানকৌড়ি, জলপিপি…। শীতকালে অতিথি পাখির দল আসে এই হ্রদে। হ্রদের জলে গোলপাতার ফাঁকে ফাঁকে ফুটে আছে নীল শাপলা। হ্রদের দুই পাশে টিলায় টিলায় ছড়ানো চায়ের গাছ। ছায়াবৃক্ষ। আরও আছে অচেনা ঝোপঝাড়। সেই ঝোপঝাড়ে ফুটে আছে নানা জাতের সাদা, কালচে, গোলাপি রঙের মায়া লাগা বুনো ফুল। ঝোপের ফাঁকে ফাঁকে দেখা মেলে ভাঁট ফুলের।
মাধবপুর লেকের চারপাশে সারা দিন আনমনে ঘুরে বেড়ানো এক দারুন অভিজ্ঞতা এনে দিবে আপনাকে, ক্লান্তি পেলে বসে বুনো নির্জনতায় ডুবে থাকতে পারবেন। চা-বাগান কর্তৃপক্ষ চা-বাগানের টিলার নিচে লেকের পাড় ঘেঁষে হাঁটার জন্য সরু পথ করে দিয়েছে। টিলার ওপর আছে খড়ের তৈরি তাঁবু। আর টিলার ওপর থেকে যেদিকেই চোখ যায় বনের নীল রেখা। মাধবপুর লেকে একসঙ্গে জল, পাহাড়, চা-বাগান—একটা বুনো নির্জনতা আছে। তবে সন্ধ্যা ছয়টার আগেই সেই জায়গাটি থেকে বেরিয়ে পড়তে হবে। সেটাই মাধবপুর চা-বাগান কর্তৃপক্ষের নির্দেশ। বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধের দূরত্ব মাধবপুর হ্রদ থেকে পাঁচ-ছয় কিলোমিটারের মতো। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং দেখতেও চমত্কার জায়গাটি এক ফাঁকে ঘুরে আসা যায়। একসঙ্গে দুটি জায়গায় সহজেই ঘোরা যেতে পারে।
কীভাবে যাবেন
মাধবপুর হ্রদে যেতে হলে ট্রেন বা বাসে করে শ্রীমঙ্গল অথবা কমলগঞ্জে আসতে হবে। প্রতিদিন ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলের পথে তিনটি আন্তঃনগর ট্রেন যাত্রা করে। পারাবত এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ৬ টায়, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস দুপুর ২টায় এবং উপবন রাত সাড়ে ১০টায়। বাসে যেতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে। রয়েছে শ্যামলী পরিবহন (এসি, নন-এসি), সিটিলিংক, হানিফ, মৌলভীবাজার সিটি (এসি, নন-এসি), তাজ, মিতালী (এসি নন এসি) বাস। তারপর কমলগঞ্জের ভানুগাছ চৌমোহনা থেকে মাধবপুর হ্রদ। ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা বাসে করে সেখানে যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেনঃ
কোলাহল মুক্ত পরিবেশে থাকতে চাইলে উঠতে পারেন চা বাগানের ভিতর বিটিআরআই রেস্ট হাউজ অথবা টি রিসোর্ট-এ। এছাড়া মনোরম পরিবেশে একটু আয়েসে থাকার জন্য রয়েছে “ভ্যাকেশন রিসোর্ট”, হবিগঞ্জ মেইন রোডেই রয়েছে এই সুন্দর রিসোর্টটি। রিসোর্টে থাকা-খাওয়া থেকে শুরু করে আপনার কাঙ্খিত ট্যুরের সকল ধরনের সহযোগীতা পাবেন। (মোবাইলঃ ০১৭৫৯৫৯৯৭১৭) এ ছাড়া শ্রীমঙ্গল শহর ও শহরতলীতে গড়ে উঠেছে অনেকগুলো রেস্ট হাউজ ও আবাসিক হোটেল । শ্রীমঙ্গলের সব দর্শনীয় স্থান দেখতে হলে আপনাকে কিছু দিন সময় নিয়ে আসতে হবে। শহরে খাওয়া দাওযার জন্য প্রচুর হোটেল রয়েছে।
No comments:
Post a Comment