লোভা-মূলাগুল, কানাইঘাট, সিলেট
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অসংখ্য ছোট বড় নদী বিধৌত অপূর্ব শোভায় শোভিত প্রাচীন জনপদটির নাম কানাইঘাট। সিলেট বিভাগীয় শহর থেকে প্রায় ৫১.২ কিলোমিটার দূরে উত্তর পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত। কানাইঘাট বাজার ঘেঁষে প্রবাহিত সুরমা নদীর দু’পারেই দু’টি বাস ষ্টেশন আছে। সীমান্তকে ঘিরে রেখেছে খাসিয়া জৈয়ন্তিয়া পাহাড়। এর পাদদেশে অবস্থিত অসংখ্য টিলা। আবার এসব টিলার মধ্য দিয়ে অসংখ্য নদী বা ছড়া পাহাড় থেকে এসেছে। এসব আঁকাবাঁকা নদীর দু’পাশে শত শত জাতের গাছপালা, আর বনজফুল, ফলে শোভিত টিলার বন-জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে নৌকায় চড়ে উঠলে কি এক অপরূপ মনোরম দৃশ্য মন কেড়ে নেয়।
কানাইঘাট উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লোভা ছড়া চা বাগান, লোভা পাথর কোয়ারী, বালুমহাল, বনায়ন প্রকল্প, রিজার্ভ ফিসারী ও লোভা নদী তীর ঘেঁষা এলাকার নয়নাভিরাম দৃশ্যকে ঘিরে রয়েছে পর্যটন শিল্পের উজ্জল সম্ভাবনা। এই প্রাচীন এলাকাটিতে রয়েছে উপভোগ করার মত বেশ কিছূ দৃশ্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় উঁচু নিচু পাহাড়। পাহাড়ের ঢালে রয়েছে ঝর্ণা লেক। যা দেখলে হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এই এলাকায় রয়েছে সুবিশাল চা বাগান। আর তাতে শত শত শ্রমিক আপন মনে কচি কচি পাতা তুলে নেয়।
লোভা ছড়া চা বাগানে ১৯২৫ সালে ইংরেজদের নির্মিত ঝুলন্ত ব্রীজ আছে। আছে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের মহান আন্তত্যাগের স্মৃতি গাঁথা শহীদ মিনার। চা বাগানের পাশ দিয়ে প্রবাহিত পাহাড়িয়া খরস্রোতা লোভা নদী। পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ ও সুন্দর। ভারত সীমান্তের কাছাকাছি লোভা এলাকায় পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌরভ-সম্ভার মানুষকে ভাবিয়ে তুলে। সূর্য ডোবার সাথে সাথেই জোনাকী পোকার মতই ভারতের বিজলী বাতিগুলো জ্বলে উঠে। চাঁদনীরাতে নবরূপ যৌবনে ভরে উঠে লোভা নদী। প্রায় সারা বৎসরই পাথর,বালু আহরিত হয় এখান থেকে। তাছাড়া মজার ব্যাপর হল খাসিয়া-জৈন্তিয়া পাহাড়ের ঢল নামার সাথে ভারত থেকে যখন কাঠ,বাঁশ নামে তখন নদী তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষ জ্বালনি কাঠ সংগ্রহে মহানন্দে নেমে পড়ে।
যেভাবে যেতে হবে
সিলেট বিভাগীয় শহর থেকে প্রায় ৫১.২ কিলোমিটার দূরে উত্তর পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত কানাইঘাট উপজেলা। সিলেট শহর থেকে কানাইঘাটে আসতে হলে সিলেট-তামাবিল রোড অথবা,জকিগজ্ঞ রোডে কানাইঘাট উপজেলা সদরে আসা যায়। কানাইঘাট বাজার ঘেঁষে প্রবাহিত সুরমা নদীর দু’পারেই দুটি বাস ষ্টেশন আছে। কানাইঘাট উপজেলা সদর থেকে সুরমা নদী দিয়ে নৌকায় লোভা-মূলাগুল এলাকার লোকজন যাতায়াত করে। এতে দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় লাগে। ইঞ্জিন চালিত নৌকা দিয়ে কানাইঘাট বজার থেকে লোভা-মূলাগুলে (রিজার্ভ করে) ২-৩ শত টাকা খরচ পড়ে।
No comments:
Post a Comment