Sunday, June 16, 2013

লোভা-মূলাগুল, কানাইঘাট, সিলেট


বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অসংখ্য ছোট বড় নদী বিধৌত অপূর্ব শোভায় শোভিত প্রাচীন জনপদটির নাম কানাইঘাট। সিলেট বিভাগীয় শহর থেকে প্রায় ৫১.২ কিলোমিটার দূরে উত্তর পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত। কানাইঘাট বাজার ঘেঁষে প্রবাহিত সুরমা নদীর দু’পারেই দু’টি বাস ষ্টেশন আছে। সীমান্তকে ঘিরে রেখেছে খাসিয়া জৈয়ন্তিয়া পাহাড়। এর পাদদেশে অবস্থিত অসংখ্য টিলা। আবার এসব টিলার মধ্য দিয়ে অসংখ্য নদী বা ছড়া পাহাড় থেকে এসেছে। এসব আঁকাবাঁকা নদীর দু’পাশে শত শত জাতের গাছপালা, আর বনজফুল, ফলে শোভিত টিলার বন-জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে নৌকায় চড়ে উঠলে কি এক অপরূপ মনোরম দৃশ্য মন কেড়ে নেয়।

কানাইঘাট উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লোভা ছড়া চা বাগান, লোভা পাথর কোয়ারী, বালুমহাল, বনায়ন প্রকল্প, রিজার্ভ ফিসারী ও লোভা নদী তীর ঘেঁষা এলাকার নয়নাভিরাম দৃশ্যকে ঘিরে রয়েছে পর্যটন শিল্পের উজ্জল সম্ভাবনা। এই প্রাচীন এলাকাটিতে রয়েছে উপভোগ করার মত বেশ কিছূ দৃশ্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় উঁচু নিচু পাহাড়। পাহাড়ের ঢালে রয়েছে ঝর্ণা লেক। যা দেখলে হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এই এলাকায় রয়েছে সুবিশাল চা বাগান। আর তাতে শত শত শ্রমিক আপন মনে কচি কচি পাতা তুলে নেয়।


লোভা ছড়া চা বাগানে ১৯২৫ সালে ইংরেজদের নির্মিত ঝুলন্ত ব্রীজ আছে। আছে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের মহান আন্তত্যাগের স্মৃতি গাঁথা শহীদ মিনার। চা বাগানের পাশ দিয়ে প্রবাহিত পাহাড়িয়া খরস্রোতা লোভা নদী। পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ ও সুন্দর। ভারত সীমান্তের কাছাকাছি লোভা এলাকায় পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌরভ-সম্ভার মানুষকে ভাবিয়ে তুলে। সূর্য ডোবার সাথে সাথেই জোনাকী পোকার মতই ভারতের বিজলী বাতিগুলো জ্বলে উঠে। চাঁদনীরাতে নবরূপ যৌবনে ভরে উঠে লোভা নদী। প্রায় সারা বৎসরই পাথর,বালু আহরিত হয় এখান থেকে। তাছাড়া মজার ব্যাপর হল খাসিয়া-জৈন্তিয়া পাহাড়ের ঢল নামার সাথে ভারত থেকে যখন কাঠ,বাঁশ নামে তখন নদী তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষ জ্বালনি কাঠ সংগ্রহে মহানন্দে নেমে পড়ে।

যেভাবে যেতে হবে
সিলেট বিভাগীয় শহর থেকে প্রায় ৫১.২ কিলোমিটার দূরে উত্তর পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত কানাইঘাট উপজেলা। সিলেট শহর থেকে কানাইঘাটে আসতে হলে সিলেট-তামাবিল রোড অথবা,জকিগজ্ঞ রোডে কানাইঘাট উপজেলা সদরে আসা যায়। কানাইঘাট বাজার ঘেঁষে প্রবাহিত সুরমা নদীর দু’পারেই দুটি বাস ষ্টেশন আছে। কানাইঘাট উপজেলা সদর থেকে সুরমা নদী দিয়ে নৌকায় লোভা-মূলাগুল এলাকার লোকজন যাতায়াত করে। এতে দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় লাগে। ইঞ্জিন চালিত নৌকা দিয়ে কানাইঘাট বজার থেকে লোভা-মূলাগুলে (রিজার্ভ করে) ২-৩ শত টাকা খরচ পড়ে।

বারেকটিলা / যাদুকাটা, সুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জ শহর থেকে ২০ কিলোমিটার এবং তাহিরপুর উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে তাহিরপুরের সীমান্তবর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড় ঘেঁষে অবস্থিত বারিক টিলা ও তার পাশ দিয়ে প্রবাহিত পাহাড়ি নদী যাদুকাটা যেন নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। প্রাচীন বাংলার প্রথম রাজধানী লাউড়ের তীরে অবস্থিত সুনামগঞ্জের সীমান্তনদী যাদুকাটাকে বলা হয় রূপের নদী।


বর্ষায় পাহাড়ি নদী যাদুকাটার বুকে স্রোতধারা আর হেমন্তে শুকিয়ে যাওয়া যাদুকাটার বুক জুড়ে ধু-ধু বালুচর এবং পার্শ্বস্থ ভারতের সারি-সারি উচু-নিচু মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড় ও বাংলাদেশের বারিকটিলার সবুজ বনায়ন মাটিয়া পাহাড় এখানে আসা লোকজনের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। বারিকটিলার উপর দাঁড়ালে একদিকে চোখে পড়ে হাওর ও অন্যদিকে সারি সারি পাহাড়। এ মনোরম দৃশ্য যে কারোরই মন কেড়ে নেয় সহজেই। যাদুকাটা ও বারেকটিলার নয়নাভিরাম দৃশ্যকে নিয়ে রয়েছে পর্যটন শিল্পের এক উজ্জ্বল সম্ভাবনার হাতছানি। যাদুকাটা যেমনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিয়ে শোভামণ্ডিত করেছে এলাকার নান্দনিকতা তেমনি যাদুকাটার বালি ও পাথর উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক।


বছরের নির্দিষ্ট দিনে যাদুকাটা নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয় বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মেলা ‘বারুণি মেলা’। এই সময় সনাতন ধর্মের লোকজন তীর্থরূপি যাদুকাটায় স্নান করার আশায় এসে জড়ো হন নদীতীরের অদ্বৈত মহাপ্রভু চৈতন্যের নবগ্রামে। তাছাড়াও বছরের বারো মাস এখানে দর্শনার্থীদের আনাগোনা লক্ষণীয়।


যেভাবে যেতে হবে

ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ – শ্যামলী আর ইউনিক ছাড়া অন্য কোনো বাস যায় না। সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুর যেতে হবে। তাহিরপুর থেকে মাত্র ১০ কিমি দুরে অবস্থিত যাদুকাটা ও বারেকটিলা। তাহিরপুরে হোটেল ও ডাকবাংলো আছে। রাতটা তাহিরপুর থানার ডাকবাংলোতে থাকতে পারেন। অথবা সুনামগঞ্জের হোটেলেও রাত্রিযাপন করতে পারেন। সুনামগঞ্জ থেকে যাদুকাটার দুরত্ব ২০ কি.মি.। সুতরাং সুনামগঞ্জ থেকে অনায়েশেই যাতায়াত করতে পারবেন।


সীতাকুন্ড ইকো পার্ক

চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চন্দ্রনাথ রির্জাভ ফরেস্ট ব্লকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সুশোভিত চিরসবুজ বনাঞ্চলে বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক অবস্থিত। এটি চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৫ কি.মি. উত্তরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং রেলপথের পূর্ব পাশে অবস্থিত।


চট্টগ্রাম শহর হতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে এগুতে থাকলে প্রথমে পাহাড়তলী এবং তারপর একে একে কাট্টলী, সিটি তোরন, কুমিরা অতিক্রম করতে করতে পূর্ব পাশে চোখে পড়বে সুউচ্চ পাহাড়ের উপর চন্দ্রনাথ মন্দির, যার পাদদেশে অবস্থিত বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক। ইকোপার্কে প্রবেশের সাথে সাথে আপনি একটি বড় ডিসপ্লে ম্যাপ দেখতে পাবেন, যার মাধ্যমে আপনি ইকোপার্ক সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারনা পাবেন। এ স্থান থেকে চন্দ্রনাথ মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ৫ কি.মি., আপনি পায়ে হেঁ‌টে অথবা জীপ, মাইক্রোতে চড়ে সেখানে যেতে পারবেন।


উঁচুনিচু নির্জন পাহাড়, হরিণ, ভালুক, বানর, খরগোশ এবং হনুমান সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর সমাহার, পাখ পাখালীর কলরব, প্রাকৃতিক ঝর্ণা, চিরসবুজ বৃক্ষরাজি সমৃদ্ধ ইকোপার্ক খুবই মনমুগ্ধকর। সন্ধায় পশ্চিম আকাশে সূর্য যখন গোধূলীর রক্তিম আভা তৈরী করে ইকোপার্কে তখন এক নৈসর্গিক পরিবেশের সৃষ্টি করে।

বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কের প্রধান ফটকের ভিতরে ডান পাশে রয়েছে বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কের প্রধান নার্সারী এবং তার অফিস। এই নার্সারীতেই আছে দেশ-বিদেশের নানা প্রচলিত ও বিলুপ্ত প্রজাতীর ফুল, ফল ও ঔষধি গাছ যেমন – অর্জুন, তেলসুর, চাপালিস, চুন্দুল, করই, জারুল, তুন, জাম, জলপাই সহ আরো অনেক। বোটানিক্যাল গার্ডেনে একটি চমৎকার অর্কিড হাউসও আছে।এখানে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতীর প্রায় ৫০ ধরনের অর্কিড আছে।

সহস্রধারা ও সুপ্তধারা জলপ্রপাত

এই চন্দ্রনাথ রিজার্ভ ফরেষ্ট এলাকায় অনেক ছোট-বড় ঝর্ণা আছে। এই সকল ঝর্ণার মধ্যে বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক এলাকার মধ্যে দুটো ঝর্ণা রয়েছে। ঝর্ণা দুটি সহস্রধারা ও সুপ্তধারা নামে পরিচিত। সহস্রধারা থেকে অবিরত পানি ঝরছে। কিন্তু সুপ্তধারা থেকে শীতকালে খুব কম পরিমান পানি ঝরে, তবে বর্ষাকালে এগুলো তাদের পরিপূর্ণ ধারায় আবর্তিত হয়।


যেভাবে যাবেনঃ

ঢাকা থেকে এসি, ননএসি বাস ছাড়ে সায়দাবাদ বাস ষ্টেশন থেকে। আরামদায়ক এবং নির্ভর যোগ্য সার্ভিস গুলো হল এস.আলম, সৌদিয়া, গ্রীনলাইন, সিল্ক লাইন, সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেস, ইউনিক প্রভূতি। সবগুলো বাসই সীতাকুণ্ডে থামে। চট্টগ্রাম থেকে বাসগুলো মাদারবাড়ী, কদমতলী বাসষ্টেশন থেকে ছাড়ে। তা ছাড়াও অলঙ্কার থেকে কিছু ছোট গাড়ী ছাড়ে ( স্থানী ভাবে মেক্সী নামে পরিচিত) সেগুলো করেও আসা যাবে।

এছাড়া ঢাকা থেকে ছেড়েঁ আসা দ্রুতগামী ট্রেন “ঢাকা মেইল” সীতাকুণ্ডে থামে, এটি ঢাকা থেকে ছাড়ে রাত ১১টায় এবং সীতাকুণ্ডে পৌঁছে পরদিন সকাল ৬.৩০ থেকে ৭টায়। অন্যান্য আন্তঃ নগর ট্রেন গুলো সরাসরি চট্টগ্রামে চলে যায়। শুধুমাত্র শিবর্তুদশী মেলার সময় সীতাকুণ্ডে থামে।

হাকালুকি হাওর


হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ হাওর।  এর আয়তন ১৮,১১৫ হেক্টর। এটি মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলায় অবস্হিত। মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জুরী, কুলাউড়া এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় এর বিস্তৃতি। ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের কারণে উজানে প্রচুর পাহাড় থাকায় হাকালুকি হাওরে প্রায় প্রতি বছরই আকষ্মিক বন্যা হয়। শীতকালে এ হাওড়কে ঘিরে পরিযায়ী পাখিদের বিচরণে মুখর হয়ে উঠে গোটা এলাকা।

বর্ষাকালে বিস্তৃত জলরাশি এ হাওরের রূপ ঠিক যেন ভাসমান সাগর। আদিগন্তু বিস্তৃত জলরাশি। জলের মাঝে মাঝে দুই-একটি বর্ষীয়ান হিজল, তমাল বৃক্ষ। অথচ শীতকালে বিস্তৃত এই হাওর ধু-ধু সবুজপ্রান্তর, কোথাও বা ধান ক্ষেত এবং খানাখন্দ নিচু ভূমিতে প্রায় ২৩৮ টি বিলের সমষ্টি। হাকালুকি হাওর মাছের জন্য প্রসিদ্ধ। হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের সংরক্ষিত জলাভূমি। শীত মৌসুমে এশিয়ার উত্তরাংশের সাইবেরিয়া থেকে প্রায় ২৫ প্রজাতির হাঁস এবং জলচর নানা পাখি পরিযায়ী হয়ে আসে। এছাড়া স্থানীয় প্রায় ১০০ প্রজাতির পাখি সারাবছর এখানে দেখা মেলে।


হাওরে প্রায় ২৩৮টি বিল রয়েছে। বিলগুলিতে প্রায় সারাবছর পানি থাকে। হাওরের জলরাশির মূল প্রবাহ হলো জুরী ও পানাই নদী। এই বিলগুলি মৎস্য সম্পদের আধার। বছরে প্রায় ২৫০০টন মাছ উৎপাদন হয়। তবে যথেচ্ছভাবে মাছ ধরার কারণে দেশী জাতের রানী, তুরাল, রাঁচি, বাতাসি, গলদাচিংড়ি, বাঘমাছ, চিতল ইত্যাদি মাছ আর এখন হাওরে পাওয়া যায় না।

হাওরে শীতকালে আগমন ঘটে অতিথি জলচর পাখির। গত শীত মৌসুমে ৪৮ প্রজাতির প্রায় ১ লাখ পাখি এসেছিল। এসব অতিথি পাখির মধ্যে ভূতি হাঁস, গিরিয়া হাঁস, ল্যাঞ্জা হাঁস, বালি হাঁস, গুটি ঈগল, কুড়া ঈগল, রাজ সরালি, পান ভুলানি, কাস্তেচড়া, পানকৌড়ি. বেগুনী কালিম, মেটেমাথা টিটি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।


হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষার্থে বিদেশী আর্থিক সহায়তায় সরকারের CWBMP প্রজেক্ট হাওর এলাকায় চলমান রয়েছে। এই প্রজেক্টের মাধ্যমে এলাকার জনগণকে সম্পৃক্ত করে জীবকূলকে রক্ষার প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে। আসছে শীতে আপনিও বেড়িয়ে যেতে পারেন হাকালুকি হাওর। প্রকৃতির সান্নিধ্য নিজেকে করে নিতে পারেন সজীব সতেজ। কুলাউড়ায় অবস্হিত CWBMP এর অফিসে যোগাযোগ করে হাওরে যেতে পারেন। এছাড়া বড়লেখা থেকে কানুনগো বাজার হয়েও ঘুরে আসতে পারেন এই হাওর।

কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে ট্রেনে অথবা বাসে কুলাউড়া শহর। সেখান থেকে রিকশা যোগে পছন্দমতো বিলের নিকটমতো গ্রাম অতঃপর ট্রেকিং। হাওর এলাকায় বিল ইজারাদারদের দোচালা কুটিরগুলোয় দু‘চারজন পর্যটক থাকার জন্য চমৎকার। তবে অবশ্যই বিল মালিকের অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। সবচেয়ে ভালো হয় বিল এলাকায় তাঁবু ফেলে রাত্রি যাপন। জোছনা রাতে তাঁবুতে যাপন, পাখি পর্যবেক্ষণ যে কোনও অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটককে বিমোহিত করবে।

রাতারগুল সোয়াম্প ফরেষ্ট


দেশের একমাত্র স্বীকৃত সোয়াম্প ফরেষ্ট বা জলার বন "রাতারগুল" সিলেটে অবস্থিত। সোয়াম্প ফরেস্ট বা জলার বন কি? পানিসহিষ্ণু বড় গাছপালা একটা বনের রূপ নিলে তবেই তাকে বলে সোয়াম্প ফরেস্ট বা জলার জঙ্গল। উপকূলীয় এলাকার বাইরে অন্যান্য জায়গার সোয়াম্প ফরেস্টগুলো সব সময় জলে প্লাবিত থাকে না। কেবল বর্ষায় এই বনের গাছগুলো আংশিক জলে ডুবে থাকে।

উত্তরে গোয়াইন নদী, দক্ষিণে বিশাল হাওর। মাঝখানে ‘জলার বন’ রাতারগুল। সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর ইউনিয়নে এই জলার বনের অবস্থান। সিলেট নগরী থেকে দেশের একমাত্র স্বীকৃত এ সোয়াম্প ফরেস্টের দূরত্ব প্রায় ২৬ কিলোমিটার। অনিন্দ্য সুন্দর বিশাল এ বনের গাছ-গাছালির বেশিরভাগ অংশই বছরের সাত মাস থাকে পানির নিচে।

শীতের শুরুতেই আনাগোনা শুরু হয় অতিথি পাখির। বনের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া লেকে চলে পাখির ‘ডুবো খেলা’। বনজুড়ে চরে বেড়ায় নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী। হাওর আর নদী বেষ্টিত অপূর্ব সুন্দর বনের দক্ষিণ পাশে সবুজের চাদরে আচ্ছাদিত জালি ও মূর্তা বেত বাগান। এর পেছনেই মাথা উঁচু করে আছে সারি সারি জারুল-হিজল-কড়চ। বনের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া লেকগুলো আলাদা সৌন্দর্য এনে দিয়েছে জলার বনটিকে।


গোটা বনের আয়তন তিন হাজার ৩২৫.৬১ একর। এর মধ্যে ৫০৪ একর বন ১৯৭৩ সালে বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। মূলত প্রাকৃতিক বন হলেও বেত, কদম, হিজল, মুর্তাসহ নানা জাতের পানি সহিষ্ণু গাছ লাগিয়েছে বন বিভাগ। বিশাল এ বনে রয়েছে জলসহিষ্ণু প্রায় ২৫ প্রজাতির উদ্ভিদ। পাখিদের মধ্যে আছে সাদা বক, কানা বক, মাছরাঙ্গা, টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ি, ঢুপি, ঘুঘু, চিল ও বাজ। শীতে মাঝেমধ্যে আসে বিশালকায় সব শকুন। আর লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে ঘাঁটি গাড়ে বালিহাঁসসহ হরেক জাতের পাখি। শুকনো মৌসুমে ডিঙ্গি নিয়ে ভেতরে গেলে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আপনাকে উড়ে সরে গিয়ে পথ করে দিবে। এ দৃশ্য আসলেই দূর্লভ!

বাংলাদেশের সব বনের থেকে রাতারগুল একেবারেই আলাদা। ঘন গাছের সারি। কিন্তু গাছগুলোর নিচের অনেকটাই ডুবে আছে পানিতে। গাছের মধ্যে করচই বেশি। হিজলে ফল ধরে আছে শয়ে শয়ে। বটও চোখে পড়বে মাঝেমধ্যে, মুর্তা গাছ কম। তবে রাতারগুলের বেশ বড় একটা অংশে বাণিজ্যিকভাবে মুর্তা লাগিয়েছে বন বিভাগ। মুর্তা দিয়ে শীতল পাটি হয়। মুর্তা বেশি আছে নদীর উল্টো পাশে। ওদিকে শিমুল বিল হাওর আর নেওয়া বিল হাওর নামে দুটো বড় হাওর আছে।


বড়ই অদ্ভুত এই জলের রাজ্য। কোনো গাছের হাঁটু পর্যন্ত ডুবে আছে পানিতে। একটু ছোট যেগুলো, সেগুলো আবার শরীরের অর্ধেকই ডুবিয়ে আছে জলে। কোথাও চোখে পড়বে মাছ ধরার জাল পেতেছে জেলেরা। ঘন হয়ে জন্মানো গাছপালার কারণে কেমন অন্ধকার লাগবে পুরো বনটা। মাঝেমধ্যেই গাছের ডালপালা আটকে দিবে পথ। হাত দিয়ে ওগুলো সরিয়ে তৈরি করতে হবে পথ। চলতে হবে খুব সাবধানে। কারণ রাতারগুল হচ্ছে সাপের আখড়া। বর্ষায় পানি বাড়ায় সাপেরা ঠাঁই নেয় গাছের ওপর।

সাপের মধ্যে রয়েছে অজগর, গুইসাপ, গোখরা, জলধুড়াসহ বিষাক্ত অনেক প্রজাতি। বর্ষায় বনের ভেতর পানি ঢুকলে এসব সাপ উঠে পড়ে গাছের ওপর। বনের ভেতর দাঁপিয়ে বেড়ায় মেছোবাঘ, কাঠবিড়ালি, বানর, ভোদড়, বনবিড়াল, বেজি, শিয়ালসহ নানা প্রজাতির বণ্যপ্রাণী। টেংরা, খলিশা, রিঠা, পাবদা, মায়া, আইড়, কালবাউস, রুইসহ আরো অনেক জাতের মাছ পাবেন এখানে। শুকনো মৌসুমে পানি কম থাকে বলে অনেক সময় ছোট ছোট মাছগুলো লাফ দিয়ে ডিঙ্গিতে উঠে যায়।

হাওরের স্বচ্ছ পানির নিচে বনগুলো দৃশ্যমান থাকায় বর্ষাকালে অনেক পর্যটকের সমাগম ঘটে এখানে। আবার শীত মৌসুমে ভিন্নরূপ ধারণ করে এ বন। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে জেগে ওঠে মূর্তা ও জালি বেতের বাগান। সে সৌন্দর্য আবার আবার অন্য রকম! বন এভাবে জলে ডুবে থাকে বছরে চার থেকে সাত মাস। বর্ষা কাটলেই দেখা যাবে অন্য চেহারা। তখন বনের ভেতরের ছোট নালাগুলো পরিণত হবে পায়ে চলা পথে। সেই পথ দিয়ে হেঁটে অনায়াসে ঘুরে বেড়ানো যায়। তো এখনই করে ফেলুন রাতারগুল ঘুরে যাওয়ার প্ল্যান। বোনাস সৌন্দর্য হিসেবে পাবেন গোয়াইন নদী দিয়ে রাতারগুল যাওয়ার অসাধারন সুন্দর পথ, বিশেষ করে বর্ষায়। নদীর চারপাশের দৃশ্যের সঙ্গে উপরি হিসেবে দেখবেন দূরে ভারতের উঁচু উঁচু সব পাহাড়।


যেভাবে যেতে হবে

রাতারগুল যাওয়া যায় বেশ কয়েকটি পথে। তবে যেভাবেই যান, যেতে হবে সিলেট থেকেই। সিলেট-জাফলংয়ের গাড়িতে উঠে নেমে যাবেন সারিঘাট। এখান থেকে টেম্পোতে করে গোয়াইনঘাট বাজার। বাজারের পাশেই নৌঘাট। এখান থেকে রাতারগুল যাওয়া-আসার জন্য নৌকা রিজার্ভ করতে হবে। তবে মনে রাখবেন, এই নৌকায় করে কিন্তু রাতারগুল বনের ভেতরে ঢোকা যাবে না। বনে ঢুকতে হবে ডিঙি নৌকায় চেপে। এই রুটটিতে যেতে সময় বেশি লাগবে এবং নৌকা ভাড়াও বেশি।

আবার সিলেটের আম্বরখানা মোড় থেকেও সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে চলে যেতে পারেন মোটরঘাট / শ্রীঙ্গী ব্রিজ। যেতে সময় লাগবে ৩০ মিনিট, ৪ জন রিজার্ভ ভাড়া পড়বে ৬০০/৭০০ টাকা। সেখানকার নৌঘাট থেকে নৌকা রিজার্ভ করে রাতারগুল যেতে পারবেন, ২/৩ ঘন্টার জন্য ভাড়া পড়বে ৩০০/৪০০ টাকা। এই পথটিতে সহজে কম সময়ে ঘুরে আসতে পারবেন বলে এই পথটি বেছে নেওয়াই শ্রেয়।

কাট্টলী সমুদ্র সৈকত


বাংলাদেশে সমুদ্র সৈকত বললেই প্রথমেই চোখের সামনে ভেসে উঠে কক্সবাজার কিংবা কুয়াকাটার মুখ। কিন্তু এর বাহিরেও যে বেশ কয়েকটি সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশে রয়েছে তা অনেকেরই অজানা। এমন একটি দৃষ্টিনন্দন আর নিরিবিলি সমুদ্র সৈকত হল কাট্টলী সমুদ্র সৈকত। চট্টগ্রাম শহর থেকে কিছুটা দূরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকতটির নাম কাট্টলী সমুদ্র সৈকত। পাহাড়তলী থানার দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের এই সমুদ্র সৈকতটি অনেকের কাছেই অজানা। চট্টগ্রামবাসী কেউ কেউ এর খবর জানলেও বাহিরের পর্যটকরা এর খবর খুব একটা জানেন না।

এই সৈকতটির আরেকটি নাম হল জেলেপাড়া সমুদ্র সৈকত। জায়গাটির নৈসর্গিক সৌন্দর্য সহজেই বিমোহিত করে প্রকৃতিপ্রেমীদের। একদিকে সমুদ্র সৈকত আর একদিকে গ্রামীণ পরিবেশ অন্য কোন সৈকতে খুজে পাওয়া যাবে না। চট্টগ্রাম শহর থেকে টোল সড়ক ধরে সহজেই পৌঁছুতে পারেন জায়গাটিতে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের একমাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পাশ দিয়েও এ সৈকতে আসা যায়। এ জায়গাটির নাম সাগরিকা সমুদ্র সৈকত। যারা জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে আসেন তাদের জন্য এই সমুদ্র সৈকতটি একটি আদর্শ ভ্রমন স্পট। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মৃতুমন্দ বাতাস, সাম্পান নৌকা, জেলেদের মাছ ধরা আর তাদের জীবনযাপন আপনাকে মুগ্ধ করবে। আর সন্ধ্যার সূর্যাস্ত আপনাকে মোহাবিষ্ট করবে। এমন নিরিবিলি সূর্যাস্ত হয়তো আপনি আর কোথাও দেখতে পারবেন না। সবকিছু মিলিয়ে এটি হতে পারে আপনার জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা।


কাট্টলী সমুদ্র সৈকত রানি রাসমণি বারুণী ঘাটে অসংখ্য পুণ্যার্থীর ঢল নামে। ওঁ সাধ্যাপতকহন্দ্রী সর্বদুঃখ বিনাশিনী, সুখদা মোক্ষদা গঙ্গা গঙ্গৈব পরমগতি এ মন্ত্র পাঠ করে প্রতি বছর চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে সনাতনী সম্প্রদায়ের পুণ্যার্থী নর-নারী রানি রাসমণি বারুণী স্নানঘাট এলাকায় পাপমুক্তির প্রত্যাশায় পুণ্যতোয়া বঙ্গোপসাগরে স্নান করে।

বারুণী স্নান ও মেলা পরিষদ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। নগরীর পাথরঘাটা গঙ্গাবাড়ি, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ মন্দাকিনী, চৌধুরীহাট ইছামতি বাড়ি, আনোয়ারার পারকি সমুদ্র সৈকত, রাউজানের কলমপতি দক্ষিণ হিঙ্গলা কাশখালি, পটিয়ার শ্রীমাই, বাঁশখালীর খানখানাবাদ সাগরচরসহ বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বারুনী স্নান ও মেলা উদযাপিত হয়ে থাকে।

যেভাবে যেতে হবে: চট্টগ্রাম শহর হতে প্রথমে আপনাকে আসতে হবে পাহাড়তলী থানায়। ব্যাক্তিগত গাড়ী কিংবা সিএনজি বা মাইক্রোবাসে আসতে পারেন পাহাড়তলী। পাহাড়তলী হতে জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামের পাশ ঘেসে আসতে হবে টোল সড়কে। টোল সড়কের পাশেই পেয়ে যাবেন কাট্টলী সৈকত। অথবা আপনি শহর হতে টোল সড়ক ধরেও আসতে পারেন কাট্টলী।


মাধবপুর লেক



সুনীল আকাশ, ঘাঢ় সবুজ পাহাড়, শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মত মনোরম চা বাগানের দৃশ্যে হারিয়ে যান আপন মনে। চারিদিকে সুউচ্চ পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত লেকটি সত্যি অপূর্ব। লেকের ঝলমল পানি, ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ, শাপলা শালুকের উপস্থিতি আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলে। আস্তে আস্তে যতই সামনের দিকে এগুতে থাকবেন ততই ভাল লাগবে। মাঝে মাঝে বানর ও হনুমানের লাফালাফির দৃশ্যও চোখে পড়ে। মাধবপুর লেকে গিয়ে পৌঁছতেই সবুজ পাতার গন্ধ যে কারো মনকে চাঙ্গা করে তুলবে। চারদিকে সবুজ পাহাড়। পাশাপাশি উঁচু উঁচু টিলা। সমতল চা বাগানে গাছের সারি। হয়তো এরই মাঝে একঝাঁক পাখি অতিথিদের আমন্ত্রণ জানাবে তাদের সুরের মুর্চ্ছনা দিয়ে। পাহাড়ী পাখির গান আর নৃত্য ছাড়াও দেখা যায় নানান প্রজাতির বন্যপ্রাণী। মাধবপুর লেক যেন প্রকৃতির নিজ হাতে অঙ্কিত মায়াবী নৈসর্গিক দৃশ্য। সুনীল আকাশ আর গাঢ় সবুজ পাহাড়, শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মত চা বাগানের এই মনোরম দৃশ্য আকর্ষন করে নিয়ে যাবে ভিন্ন জগতে। চারদিকে সুউচ্চ পাহাড়ের মাঝখানে অবসি’ত লেকটি খুবই চমৎকার।




কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নে পাত্রখলা চা বাগানে লেকটির অবস্থান। এটি মৌলভীবাজার শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে ও শ্রীমঙ্গল থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্বে অবসি'ত। খানাখন্দে ভরা চা বাগানের রাস্তা দিয়ে এ লেকে যেতে হয়। মাধবপুর লেকের ঝলমল পানি, ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ, শাপলা শালুকের উপসি'তি মনোমগ্ধকর অনুভূতি জন্মায়। লেকের ভেতর ঝলমলে পানি, পানির ওপর নীলপদ্ম। ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ। শাপলা-শালুকের ভেতর হাঁসের খেলা। দশটি বাঁক নিয়ে এঁকেবেঁকে পাহাড়ের ভেতর তার চলা। চারদিকে সবুজ পাহাড়। উঁচু-নিচু টিলার সমাহার। জায়গায় জায়গায় ঢেউখেলা চা বাগানে সারি সারি বিভিন্ন গাছ। পাহাড়ি গাছের ফাঁক দিয়ে চুঁইয়ে আসা সূর্যকিরণ। হাঁটতে হাঁটতে এসব দৃশ্যেরই দেখা পাবেন আপনি।

বাইরে থেকে কিছু বোঝার উপায় নেই। টিলার পাঁজর ঘেঁষে এমন টলটলে জলের ভাসান। সেই জলের বুকে ১২ মাসই কমবেশি ভেসে বেড়ায় নানা জাতের হাঁস, সরালি, পানকৌড়ি, জলপিপি…। শীতকালে অতিথি পাখির দল আসে এই হ্রদে। হ্রদের জলে গোলপাতার ফাঁকে ফাঁকে ফুটে আছে নীল শাপলা। হ্রদের দুই পাশে টিলায় টিলায় ছড়ানো চায়ের গাছ। ছায়াবৃক্ষ। আরও আছে অচেনা ঝোপঝাড়। সেই ঝোপঝাড়ে ফুটে আছে নানা জাতের সাদা, কালচে, গোলাপি রঙের মায়া লাগা বুনো ফুল। ঝোপের ফাঁকে ফাঁকে দেখা মেলে ভাঁট ফুলের।




মাধবপুর লেকের চারপাশে সারা দিন আনমনে ঘুরে বেড়ানো এক দারুন অভিজ্ঞতা এনে দিবে আপনাকে, ক্লান্তি পেলে বসে বুনো নির্জনতায় ডুবে থাকতে পারবেন। চা-বাগান কর্তৃপক্ষ চা-বাগানের টিলার নিচে লেকের পাড় ঘেঁষে হাঁটার জন্য সরু পথ করে দিয়েছে। টিলার ওপর আছে খড়ের তৈরি তাঁবু। আর টিলার ওপর থেকে যেদিকেই চোখ যায় বনের নীল রেখা। মাধবপুর লেকে একসঙ্গে জল, পাহাড়, চা-বাগান—একটা বুনো নির্জনতা আছে। তবে সন্ধ্যা ছয়টার আগেই সেই জায়গাটি থেকে বেরিয়ে পড়তে হবে। সেটাই মাধবপুর চা-বাগান কর্তৃপক্ষের নির্দেশ। বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধের দূরত্ব মাধবপুর হ্রদ থেকে পাঁচ-ছয় কিলোমিটারের মতো। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং দেখতেও চমত্কার জায়গাটি এক ফাঁকে ঘুরে আসা যায়। একসঙ্গে দুটি জায়গায় সহজেই ঘোরা যেতে পারে।



কীভাবে যাবেন
মাধবপুর হ্রদে যেতে হলে ট্রেন বা বাসে করে শ্রীমঙ্গল অথবা কমলগঞ্জে আসতে হবে। প্রতিদিন ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলের পথে তিনটি আন্তঃনগর ট্রেন যাত্রা করে। পারাবত এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ৬ টায়, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস দুপুর ২টায় এবং উপবন রাত সাড়ে ১০টায়। বাসে যেতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে। রয়েছে শ্যামলী পরিবহন (এসি, নন-এসি), সিটিলিংক, হানিফ, মৌলভীবাজার সিটি (এসি, নন-এসি), তাজ, মিতালী (এসি নন এসি) বাস। তারপর কমলগঞ্জের ভানুগাছ চৌমোহনা থেকে মাধবপুর হ্রদ। ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা বাসে করে সেখানে যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেনঃ
কোলাহল মুক্ত পরিবেশে থাকতে চাইলে উঠতে পারেন চা বাগানের ভিতর বিটিআরআই রেস্ট হাউজ অথবা টি রিসোর্ট-এ। এছাড়া মনোরম পরিবেশে একটু আয়েসে থাকার জন্য রয়েছে “ভ্যাকেশন রিসোর্ট”, হবিগঞ্জ মেইন রোডেই রয়েছে এই সুন্দর রিসোর্টটি। রিসোর্টে থাকা-খাওয়া থেকে শুরু করে আপনার কাঙ্খিত ট্যুরের সকল ধরনের সহযোগীতা পাবেন। (মোবাইলঃ ০১৭৫৯৫৯৯৭১৭) এ ছাড়া শ্রীমঙ্গল শহর ও শহরতলীতে গড়ে উঠেছে অনেকগুলো রেস্ট হাউজ ও আবাসিক হোটেল । শ্রীমঙ্গলের সব দর্শনীয় স্থান দেখতে হলে আপনাকে কিছু দিন সময় নিয়ে আসতে হবে। শহরে খাওয়া দাওযার জন্য প্রচুর হোটেল রয়েছে।


নিঝুম দ্বীপ


সমুদ্র কোলে অস্তগামী সূর্য। কেওড়া বন থেকে দল বেঁধে ঘাস বনে ছুটে আসছে মায়াবী চিত্রা হরিণ। দূর বালুচরে চিকচিক খেলা করছে মিষ্টি সূর্য রশ্মি। কেওড়া, গেওড়া বনের কোলঘেঁষে বয়ে যাওয়া সরু খালের পাড়ে সবুজের আচ্ছাদিত নক্‌শিকাঁথার মাঠ। ওপরে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির ওড়াওড়ি। বনে পাখির কিচিরমিচির। শীতের বিকালে প্রকৃতির এমন মায়াবীরূপ উপভোগ করা যায় নিজুম দ্বীপে। বঙ্গোপসাগরের কোলে উত্তর ও পশ্চিমে মেঘনার শাখা নদী, আর দক্ষিণ এবং পূর্বে সৈকত ও সমুদ্র বালুচরবেষ্টিত ছোট সবুজ ভূখণ্ড নিঝুম দ্বীপ এখন পর্যটকদের জন্য এক আকর্ষণীয় স্থান।

নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার অর্ন্তগত নিঝুম দ্বীপ। একে 'দ্বীপ' বলা হলেও এটি মূলত একটি 'চর'।  নিঝুম দ্বীপের পূর্ব নাম ছিলো চর-ওসমান। ওসমান নামের একজন বাথানিয়া তার মহিষের বাথান নিয়ে প্রথম নিঝুম দ্বীপে বসত গড়েন। তখন এই নামেই এর নামকরণ হয়েছিলো। পরে হাতিয়ার সাংসদ আমিরুল ইসলাম কালাম এই নাম বদলে নিঝুম দ্বীপ নামকরণ করেন। মূলত বল্লারচর, চর ওসমান, কামলার চর এবং চুর মুরি- এই চারটি চর মিলিয়ে নিঝুম দ্বীপ।




প্রায় ১৪,০০০ একরের দ্বীপটি ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের দিকে জেগে ওঠে। মাছ ধরতে গিয়ে হাতিয়ার জেলেরা নিঝুমদ্বীপ আবিস্কার করে। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি নিঝুমদ্বীপে জনবসতি শুরু হয়। মূলত হাতিয়ার জাহাজমারা ইউনিয়ন হতে কিছু জেলে পরিবার প্রথম নিঝুমদ্বীপে আসে। নিঝুমদ্বীপ সংলগ্ন এলাকায় প্রচুর ইছা মাছ (চিংড়ি মাছ) ধরা পড়তো বিধায় জেলেরা এই দ্বীপের নাম দেয় ‘‘ইছামতির দ্বীপ’’। এই দ্বীপটিতে মাঝে মাঝে বালির ঢিবি বা টিলার মত ছিল বিধায় স্থানীয় লোকজন এই দ্বীপকে বাইল্যার ডেইল বলেও ডাকতো।

কালক্রমে ইছামতি দ্বীপ নামটি হারিয়ে গেলেও স্থানীয় লোকেরা এখনো এই দ্বীপকে বাইল্যার ডেইল বলেই সম্বোধন করে। বাংলাদেশের বনবিভাগ ৭০-এর দশকে বন বিভাগের কার্যক্রম শুরু করে। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে চার জোড়া হরিণ ছাড়ে। নিঝুম দ্বীপ এখন হরিণের অভয়ারণ্য। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের হরিণশুমারি অনুযায়ী হরিণের সংখ্যা ২২,০০০। আইলায় বেশ কিছু হরিণ মারা গেলেও ধারনা করা হয় এখন নিঝুম দ্বীপে ৪০ হাজারের বেশি হরিন আছে। নোনা পানিতে বেষ্টিত নিঝুম দ্বীপ কেওড়া গাছের অভয়ারণ্য। ম্যানগ্রোভ বনের মধ্যে সুন্দরবনের পরে নিঝুম দ্বীপকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন বলে অনেকে দাবী করেন।
 নিঝুম দ্বীপে রয়েছে প্রায় ৩৫ প্রজাতির পাখি। এছাড়াও শীতের মৌসুমে অজস্র প্রজাতির অতিথির পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয় নিঝুম দ্বীপ। নিঝুম দ্বীপে বিশাল এলাকা পলিমাটির চর। জোয়ারের পানিতে ডুবে এবং ভাটা পড়লে শুঁকোয়। জোয়ারের পানিতে বয়ে আসা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এদের একমাত্র খাবার। এখানে রয়েছে মারসৃপারি নামে একধরনের মাছ যাদেরকে উভচর প্রাণী বলা হয়। ৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে এই মারসৃপার, ৬-৯ ইঞ্চি লম্বা হয়। বর্ষা মৌসুমে ইলিশের জন্য নিঝুম দ্বীপ বিখ্যাত। এই সময় ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা নিঝুম দ্বীপে মাছ কিনতে আসে।। এছাড়া শীত কিংবা শীতের পরবর্তী মৌসুমে নিঝুম দ্বীপ চেঁউয়া মাছের জন্য বিখ্যাত। জেলেরা এই মাছ ধরে শুঁটকি তৈরি করেন।

 

কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে নিঝুম দ্বীপ যাওয়ার সহজ রুটটি হলো- সদরঘাট থেকে লঞ্চে হাতিয়ার তমরুদ্দি। এ পথে দুটি লঞ্চ নিয়মিত চলাচল করে। এমভি পানামা, ফোন- ০১৯২৪০০৪৬০৮ এবং এমভি টিপু-৫, ফোন-০১৭১১৩৪৮৮১৩। ভাড়া ডাবল কেবিন ১৮০০ টাকা, সিঙ্গেল ১০০০ টাকা। ডেকে জনপ্রতি ২৫০ টাকা মত হবে। ঢাকা থেকে ছাড়ে বিকেল সাড়ে ৫ টায় আর তমরুদ্দি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়ে দুপুর সাড়ে বরোটায়। তমরুদ্দি থেকে স্কুটারে বন্দরটিলা ঘাট ভাড়া ৬০০-৬৫০ টাকা মত। যাওয়া যাবে ৩/৪জন। স্কুটার ছাড়া বাস+রিকসা করে বন্দরটিলা ঘাটে যাওয়া যায়। বাস ভাড়া ৩০-৪০ টাকা, রিকসা ভাড়া ৫০-৬০ টাকা। বন্দরটলা ঘাট থেকে ট্রলারে চ্যানেল পার হলেই নিজুম দ্বীপের বন্দরটিলা। চ্যানেল পার হতে সময় লাগবে ১৫ মিনিট। এটা নিঝুম দ্বীপের এক প্রান্ত, আসল গন্তব্য অন্য প্রান্তের নামা বাজার। বন্দরটিলা থেকে নামা বাজার যেতে হবে রিকশায়। ভাড়া ১৫০-২০০ টাকা মত। মোটর সাইকেলও নিয়ে নিতে পারেন। ক্লান্ত না হয়ে পড়লে ছবি তুলতে তুলতে হেটেও যাওয়া যায়।

 

এছাড়া ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত অনেকগুলো চেয়ারকোচ সরাসরি নোয়াখালীতে যাতায়ত করে। চার থেকে সাড়ে চার ঘন্টায় এগুলো সরাসরি মাইজদী সোনাপুর এসে পৌঁছে ভাড়া ৩১০ টাকা মত। সকাল সাতটায় কমলাপুর থেকে ছাড়ে উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেন । এছাড়া ঢাকা সাঈদাবাদ থেকে আধা ঘন্টা পর পর যাত্রীসেবা বাস গুলো ছাড়ে নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে।

নোয়াখালী সোনাপুর পৌঁছে সেখান থেকে যেতে হবে চেয়ারম্যান ঘাট। বাস, টেম্পু বা বেবীতে সরাসরি ৪০ কিঃমিঃ দক্ষিণে সুধারামের শেষ প্রান্তে চর মজিদ স্টিমার ঘাট। তার পরেই হাতিয়া যাবার চেয়ারম্যান ঘাট। সোনাপুর থেকে একটি বেবী রিজার্ভ নিলে ৩০০-৪০০ টাকায় যাওয়া যায়। টেম্পো, বাসে জনপ্রতি ভাড়া আরো কম। চর মজিদ ঘাট থেকে ট্রলার কিংবা সী-ট্রাকে করে হাতিয়া চ্যানেল পার হয়ে যেতে হবে হাতিয়ার নলচিরা ঘাটে। সময় লাগে প্রায় দুই ঘন্টা। । নলচিরা বাজার থেকে যেতে হবে হাতিয়ার দক্ষিণে জাহাজমারা। সময় নেবে আধা ঘন্টা। জাহাজমারা থেকে ট্রলারে সরাসরি নিঝুম দ্বীপ। সময় নেবে ৪০-৫০মিনিট। তবে দলবেঁধে গেলে ট্রলার রিজার্ভ করে সরাসরিচেয়ারম্যান ঘাট থেকে নিঝুম দ্বীপ যাওয়া যায়। ঘাট থেকে নদীপথে হাতিয়া অথবা নিঝুম দ্বীপে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে জোয়ারের জন্য।

কোথায় থাকবেনঃ
নিঝুম দ্বীপে থাকার জন্য একমাত্র ভালো মানের জায়গা হলো অবকাশ পর্যটনের নিঝুম রিসর্ট। এখানে ২ শয্যার কক্ষ ভাড়া ১০০০ টাকা, ৩ শয্যার কক্ষ ১২০০ টাকা, ৪ শয্যার কক্ষ ১৮০০ টাকা, ৫ শয্যার ডরমিটরির ভাড়া ১০০০ টাকা, ১২ শয্যার ডরমিটরি ২৪০০ টাকা। ঢাকা থেকে এ রিসর্টের বুকিং দেয়া যায়। যোগাযোগঃ অবকাশ পর্যটন লিমিটেড, শামসুদ্দিন ম্যানশন, ১০ম তলা, ১৭ নিউ ইস্কাটন, ঢাকা। ফোন- ৮৩৫৮৪৮৫, ৯৩৪২৩৫১, ০১৫৫২৪২০৬০২, ০১৭৩৮২৩০৬৫৫, ০১৭১৬৭৮৯৬৩৮।

এখানকার স্থানীয় বাজারে খুব সস্তায় অল্প দামে চার পাঁচটি আবাসিক বোডিং আছে। তাছাড়া বন বিভাগের একটি চমৎকার বাংলো আছে। পাশেই আছে জেলা প্রশাসকের ডাক বাংলো। এগুলোতে আগে ভাগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে থাকার ব্যবস্থা করা যায়। তাছাড়া রেড-ক্রিসেন্ট ইউনিট ও সাইক্লোন সেন্টারেও থাকার ব্যবস্থা করা যায়।

 

সঙ্গে যা নেবেনঃ
নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণে আপনার ট্রাভেল ব্যাগটি যথা সম্ভব হালকা করার চেষ্টা করবেন। অতিরিক্ত কাপড় কিংবা কোন জিনিস পত্র সঙ্গে নেবেন না। একটি ভালো শীতের কাপড়, কান টুপি, রোদ টুপি, জঙ্গল শু, টর্চ, বাইনোকুলার, ক্যামেরা, মেমোরি কার্ড, দরকারি ঔসধ, ওরস্যালাইন ইত্যাদি নিতে ভুলবেন না।

নিঝুম দ্বীপে এখন হরিণের সংখ্যা ৪০ হাজাররের মত। তারপরেও হরিণ দেখতে হলে এখানে ভ্রমণ কালীন সময়ে কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। বনে ঢুকলে নিঃশব্দে চলাচল করতে হবে। সামান্য হৈ চৈ করলে এখানে হরিণের দেখা মেলা দুস্কর। জঙ্গলে ট্রেকিং এর সময় যথা সম্ভব সবাই হালকা রঙের সুতি পোশাক পড়বেন। বন্য প্রাণীদের দৃষ্টি খুব প্রখর। অতি উজ্জ্বল পোশাকের কারণে দূর থেকেই আপনার আগমন টের পেয়ে যাবে ওরা। হরিণের দল দেখতে বা ছবি তুলতে চৌধুরী খালের শেষ মাথা ভালো, ওই দিকটায় হরিণ বেশি দেখা যায়। ভালো ছবি পেতে চাইলে গভীর জঙ্গলে ঘাপটি মেরে বেশ কিছু সময় বসে থাকতে হবে। তবে ভয় নেই বনে বন্য কুকুর ছাড়া হিংস্র কিছু নেই।
যারা উচ্ছাস উচ্ছলতা আর রোমাঞ্চে জীবনকে অর্থবহ করতে চান তারা নিঝুম দ্বীপকে ঘিরে, সে আশা ষোল কলা পূর্ণ করতে পারেন। শীত মৌসুমে সাগর শান্ত থাকলেও বছরের যেকোন সময় এখানে আসা যায় এপ্রিল থেকে সাগর ধীরে ধীরে অশান্ত বা গরম হতে থাকে। তখন ঢেউয়ের উচ্চতাও বৃদ্ধি পায়। ট্রলারেসে তরঙ্গ বিক্ষুদ্ধ সাগর পাড়ি দিতে প্রয়োজন পড়ে সাহসের। সে সময় এক রোমাঞ্চ অভিজ্ঞতায় দুধর্ষ অভিযাত্রীর মত মনে হবে নিজেকে। উদ্দাম ঢেউয়ে ছিটকে আসা সমুদ্রের লোনা জল পুলকিত হবে হৃদয়। এ সময় সমুদ্র পাড়ি হবে জীবনের রোমাঞ্চকর হৃত-কাঁপানো অভিজ্ঞতা।

Saturday, February 9, 2013

Jaflong & Srimongol: Nature,Land,River in Sylet


Jaflong


Jaflong is one of the most attractive tourist spots in Sylhet division. Jaflong is a natural tourist spot in the Division of Sylet, Bangladesh . It is located in Gowainghat Upozila of Sylet District and situated at the border between Bangladesh and the Indian state of Meghalaya. It is just below the mountain range. Jaflong is famous for its stone collections and is home of the Khasi tribe. It's about 60 km far from Sylhet town and takes two hours drive to reach there. Jaflong is also a scenic spot nearby amidst tea gardens and rate beauty of rolling stones from hills. It is situated besides the river Mari in the lap of Hill Khashia.

The Mari river is coming from the great Himalayas of India, which bringing million tons of stone boulders with its tide. You can watch the stone collection from the river in Jaflong as well as you can enjoy the boating in the river Mari. Jaflong is totally a hilly area of real natural beauty where hills are greenish with the forests.

Lots of wild animal lives in this forest, so you need to be careful to enter in the forest alone. You can see the lifestyle of Tribe Khashia in Jaflong. If you intend to visit Jaflong it is advisable to start from Sylhet in the early morning so that you can comeback by evening covering the other tourists spots of nearby areas of Jaflong. The other tourist areas nearby Jaflong are Tamabil, Sripur and Jaintapur.

The land grabbers occupied government khas land and reserved forestland and extracted stone by cutting small hills polluting the environment of Jaflong. They also established crushing mills on the forestland without permission from government

Srimongol


Srimongal is the place of tea gardens, hills and forest areas on the hills. Within your eyesight you will find green throughout. Its is famous for the largest tea gardens of world covered by lush green carpet. One can have a look into the spectacular tea processing at Tea Research Institute. Bangladesh produces and exports a large quantity of high quality tea every year. Most of the tea estates are in Sremongol. It is called "The land of two leaves and a bud".

It is also called camellia, green carpet or Tea Mountain. There are a lot of tea estates including the largest one in the world. The terraced tea garden, pineapple, rubber and lemon plantations from a beautiful landscape. It is known as the tea capital in Bangladesh. Just offer entering into the tea estates the nice smells and green beauty will lead you many kilometers away. There are some hotels in Srimongol where you can stay, but if you can manage to stay in the Tea garden that will give you a different type of memorable experience. For that you will have to take the permission from the owner of any tea state.


Travel information
If you want to go to Sreemangal from Dhaka, you may follow the instructions given below. First you go to Kamlapur, Fakirapul and Saedabad of Dhaka city & buy a bus ticket from Dhaka to Sreemangal (Please remember, buses are available very early in the morning. Till noon you will get find any bus from Dhaka to Sreemangal). When you reach Srimongal, you will be dropped at Dhaka bus stand. You can rent a rickswa for going Choumohona at Sreemangal. Actually Choumohona is the center of Sreemangal town. There you will find several hotel like Hill town Rest House(Vanuganj Road), United, Tea town, Rain Forest Rest House(Habiganj Road) etc. el .Tea Resort is also available. To avail tea resort booking is mandatory. Its cost around 5000 BDT for 3 room banglow. Normal hotel is not bad for living 2 or 3 days. You will find there AC & Non-AC rooms at a cheap rate [120tk (Non-AC) to 800tk (AC)]. I was at that hotel for 7 days and their services made me satisfied. After that you can go to Nilkantha Tea stall at Ramnagar or Near BDR camp. For reaching that place please rent a rickswa from Choumohona to Kalighat (rent 10tk-20tk. Lawasara, Madhabpur lake are nearest tourist spots near Sreemangal.

Tuesday, January 22, 2013

Bangladesh:General Knowledge

Bangladesh-Fast Facts




Official Name
:
The People's Republic of Bangladesh
Geographical Location
:
Latitude between 20o34' and 26o38' North
Longitude between 88o01' and 92o41' East
Area
:
147,570 sq. km.
Boundaries
:
North - India (West Bengal and Meghalaya), West - India (West Bengal) East - India (Tripura and Assam) and Myanmar, South-Bay of Bengal.
Capital City
:
Dhaka
Other Major Cities
:
Chittagong, Khulna, Sylhet, Rajshahi, Barisal
Standard Time
:
GMT +6 Hours
Climate Variation
:
Winter 11o C - 20o C (October - February)
Summer 21o C - 38C (March - September)
Rainfall
:
1100 mm to 3400mm (June - August)
Humidity
:
Highest 99% (July)
Lowest 36% (December & January)
Population
:
145 million
Literacy Rate
:
60%
Language
:
Bangla (national language). Spoken by 95%, other dialects 5%, English is widely understood and spoken.
Principal Crops
:
Rice, Jute, Tea, Wheat, Sugarcane, Pulses, Mustard, Potato, Vegetables.
Principal Rivers
:
Padma, Meghna, Jamuna, Surma, Brahmaputra, Karnaphuli, Teesta, Sitalakhya, Rupsha, Madhumati, Gorai, Mahananda etc.
Principal Industries
:
Garments, Tea, Ceramics, Cement, Leather, Jute, Textiles, Electric and Electronics, Medicine, Fishing.
Principal Exports
:
Garments, Knitwear, Frozen Shrimps, Tea, Leather and Leather products, Jute and Jute products, Ceramics etc.
Principal Imports
:
Wheat, Fertilizer, Petroleum goods, Cotton, Edible Oil etc.
Electricity
:
220 Volts AC in all cities and towns